শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ – এর পাঁচালী

শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ – এর পাঁচালী শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালী: গুরুকৃপার আলোকে

 

শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ – এর পাঁচালী 

 

স্তুতিঃ

যন্ময়া ভক্তিযোগেন পত্রং পুষ্পং ফলং জলম্।

নিবেদিতঞ্চ নৈবেদ্যং তদ্‌গৃহাণানুকম্পয়া ।।

ত্বদীয়ং বস্তু গোবিন্দ তুভ্যমেব সমর্পয়ে।

গৃহাণ সুমুখো ভুত্বা প্রসীদ পুরুষোত্তম।।

মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন।

যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তু মে।।

অমোঘং পুণ্ডরীকাক্ষং নৃসিংহং দৈত্যসূদনম্।

হৃষীকেশং জগন্নাথং, বাগীশং বরদায়কম্।।

সগুণঞ্চ গুণাতীতং, গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্।

জনার্দ্দনং জনানন্দং জানকীবল্লভং হরিম্।।

প্রণমানি সদা ভক্ত্যা নারায়ণমতঃপরম্।

দুর্গমে বিষমে ঘোরে, শত্রুণা পরিপীড়িতে।।

নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্টভয়েষু চ।

নামান্যেতানি সংকীর্ত্ত্য ঈপ্সিতং ফলমাপ্নুয়াৎ।।

সত্যনারায়ণং দেবং বন্দেঽহং কামদংপ্রভুম্।

লীলয়া বিততং বিশ্বং যেন তস্মৈ নমো নমঃ।।

শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ-এর পাঁচালীর স্তুতির ব্যাখ্যা

এই স্তোত্রটি শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ দেবের প্রতি ভক্তিভাবপূর্ণ প্রশস্তি এবং প্রার্থনা। এখানে ভক্তের শুদ্ধ চিত্তে নিবেদিত উপহার গ্রহণ করার অনুরোধ, ঈশ্বরের অনন্ত মহিমা, এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণের বার্তা রয়েছে।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "যন্ময়া ভক্তিযোগেন পত্রং পুষ্পং ফলং জলম্।
নিবেদিতঞ্চ নৈবেদ্যং তদ্‌গৃহাণানুকম্পয়া।।"

➡️ ভক্তি সহকারে যে পত্র (পাতা), পুষ্প (ফুল), ফল বা জল আমি নিবেদন করি, হে প্রভু, তা করুনাপূর্ণ দৃষ্টিতে গ্রহণ করুন।
➡️ এই শ্লোকটি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার (৯.২৬) প্রসিদ্ধ শ্লোকের অনুরূপ, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, ভক্তিভাবে নিবেদিত যেকোনো সামান্য উপহারও তিনি গ্রহণ করেন।

🔹 "ত্বদীয়ং বস্তু গোবিন্দ তুভ্যমেব সমর্পয়ে।
গৃহাণ সুমুখো ভুত্বা প্রসীদ পুরুষোত্তম।।"

➡️ হে গোবিন্দ! যা কিছু আমার আছে, তা সবই তোমারই দান। আমি তা তোমাকেই সমর্পণ করছি।
➡️ হে পুরুষোত্তম! অনুগ্রহ করে প্রসন্ন মনে আমার এই নিবেদন গ্রহণ করুন।

🔹 "মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন।
যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তু মে।।"

➡️ হে জনার্দন! আমার পূজা যথাযথ মন্ত্র, শুদ্ধাচার বা নিখুঁত আনুষ্ঠানিকতা (ক্রিয়া) ছাড়াই হতে পারে, এমনকি যথেষ্ট ভক্তিও থাকতে পারে না।
➡️ তবুও, আমি তোমার দয়ায় আশীর্বাদ চাই, যেন আমার পূজা পরিপূর্ণ হয়।
➡️ এই শ্লোকটি ঈশ্বরের করুণার প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ।

🔹 "অমোঘং পুণ্ডরীকাক্ষং নৃসিংহং দৈত্যসূদনম্।
হৃষীকেশং জগন্নাথং, বাগীশং বরদায়কম্।।"

➡️ ভগবান সত্যনারায়ণ হলেন পুণ্ডরীকাক্ষ (পদ্মনয়নী, বিষ্ণুর আরেক নাম), নৃসিংহ (দৈত্য-নাশক), হৃষীকেশ (ইন্দ্রিয়দের অধিপতি), জগন্নাথ (সমগ্র জগতের অধিপতি), এবং বরদায়ক (বরদানকারী)।
➡️ এই শ্লোকের মাধ্যমে সত্যনারায়ণের বিভিন্ন রূপ ও নাম বন্দনা করা হয়েছে।

🔹 "সগুণঞ্চ গুণাতীতং, গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্।
জনার্দ্দনং জনানন্দং জানকীবল্লভং হরিম্।।"

➡️ সত্যনারায়ণ সগুণীও (যিনি বিভিন্ন গুণাবলীর অধিকারী) এবং গুণাতীতও (যিনি সকল গুণের ঊর্ধ্বে)।
➡️ তিনি গোবিন্দ (যিনি গোপ ও ইন্দ্রিয়দের পালন করেন), গরুড়ধ্বজ (যাঁর পতাকা গরুড় চিহ্নিত), জনার্দ্দন (সকল জীবের কষ্টনাশক), জনানন্দ (সকলকে আনন্দদায়ক), জানকীবল্লভ (সীতার স্বামী), এবং হরি (যিনি পাপ ও দুঃখ বিনাশ করেন)।

🔹 "প্রণমানি সদা ভক্ত্যা নারায়ণমতঃপরম্।
দুর্গমে বিষমে ঘোরে, শত্রুণা পরিপীড়িতে।।
নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্টভয়েষু চ।"

➡️ আমি চিরদিন ভক্তিভরে নারায়ণকে প্রণাম করি।
➡️ দুর্গম (কঠিন) অবস্থায়, সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে, শত্রুদের অত্যাচারে ও ভয়াবহ বিপদে তিনি যেন আমাদের উদ্ধার করেন।

🔹 "নামান্যেতানি সংকীর্ত্ত্য ঈপ্সিতং ফলমাপ্নুয়াৎ।।
সত্যনারায়ণং দেবং বন্দেঽহং কামদংপ্রভুম্।"

➡️ যদি কেউ এই সমস্ত নাম উচ্চারণ করে সংকীর্তন করে, তবে সে তার ইচ্ছিত ফল লাভ করবে।
➡️ সত্যনারায়ণ দেবের বন্দনা করি, যিনি ইচ্ছা পূরণকারী এবং সকল কষ্ট দূরকারী।

🔹 "লীলয়া বিততং বিশ্বং যেন তস্মৈ নমো নমঃ।।"

➡️ যিনি লীলার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে বিস্তৃত করেছেন, সেই সত্যনারায়ণকে বারংবার প্রণাম।
➡️ এখানে সত্যনারায়ণকে সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।


উপসংহার

এই স্তোত্রটি শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রত এবং পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, তাঁর মহিমা কীর্তন, এবং ভক্তের কাতর প্রার্থনা ফুটে উঠেছে। শাস্ত্র মতে, শ্রী সত্যনারায়ণের নাম জপ, সংকীর্তন ও উপাসনা করলে ভক্তের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয় এবং জীবনের সকল সংকট দূর হয়।

🔹 মূল বার্তা:
➡️ ঈশ্বরের প্রতি একাগ্রতা ও ভক্তি থাকলে তিনি যে কোনো উপাসনা গ্রহণ করেন।
➡️ সত্যনারায়ণের নাম সংকীর্তন করলে সকল কামনা পূর্ণ হয়।
➡️ সকল বিপদ ও দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভগবান নারায়ণের আশ্রয় নেওয়া উচিত।

এই স্তুতিতে যে গভীর ভক্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তির প্রকাশ ঘটেছে, তা শ্রী সত্যনারায়ণ পূজার অন্যতম মূল ভিত্তি। 🙏

-:পুষ্পাঞ্জলি:-

ওঁ নমস্তে বিশ্বরুপায়, শঙ্খচক্রধরায় চ।

পদ্মনাভায় দেবায়, হৃষিক-পতয়ে নমঃ।।

নমোহনন্তস্বরূপায়, ত্রিগুণাত্মবিভাসিনে।

এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ ওঁ সত্যনারায়ণায় নমঃ।।

পুষ্পাঞ্জলি (Pushpanjali) শব্দটি দুইটি অংশে বিভক্ত—"পুষ্প" (ফুল) এবং "অঞ্জলি" (সমর্পণ বা প্রণাম)। এটি মূলত দেবতাকে ফুল নিবেদন করার একটি পবিত্র প্রার্থনা। এখানে উল্লেখিত পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র শ্রীবিষ্ণু বা সত্যনারায়ণ ভগবানকে উদ্দেশ্য করে নিবেদন করা হয়।

মন্ত্রের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "ওঁ নমস্তে বিশ্বরুপায়, শঙ্খচক্রধরায় চ।"
➡️ ওঁ শব্দটি পরম ব্রহ্মের প্রতীক।
➡️ নমস্তে বিশ্বরূপায়—আমি সেই ঈশ্বরকে প্রণাম জানাই যিনি বিশ্বরূপ ধারণ করেন।
➡️ শঙ্খচক্রধরায় চ—আমি সেই ঈশ্বরকে প্রণাম জানাই যিনি শঙ্খ ও চক্র ধারণ করেন (ভগবান বিষ্ণুর দুইটি প্রধান অস্ত্র)।

🔹 "পদ্মনাভায় দেবায়, হৃষিক-পতয়ে নমঃ।।"
➡️ পদ্মনাভায় দেবায়—আমি সেই দেবতাকে প্রণাম জানাই যার নাভিতে পদ্ম বিদ্যমান (ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি)।
➡️ হৃষীক-পতয়ে নমঃ—আমি সেই ঈশ্বরকে প্রণাম জানাই যিনি সকল ইন্দ্রিয়ের (হৃষীক) অধীশ্বর।

🔹 "নমোহনন্তস্বরূপায়, ত্রিগুণাত্মবিভাসিনে।"
➡️ নমো অনন্ত-স্বরূপায়—আমি সেই অনন্ত, অসীম রূপধারী ঈশ্বরকে প্রণাম জানাই।
➡️ ত্রিগুণাত্ম বিভাসিনে—যিনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণ এই তিনটি গুণের মাধ্যমে জগতকে আলোকিত করেন।

🔹 "এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ ওঁ সত্যনারায়ণায় নমঃ।।"
➡️ এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ—এই পুষ্পাঞ্জলি (ফুলের নিবেদন)
➡️ ওঁ সত্যনারায়ণায় নমঃ—আমি সত্যনারায়ণ ভগবানকে প্রণাম জানাই।

উপসংহার

এই পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুকে তথা সত্যনারায়ণকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে ফুল নিবেদন করা হয়। এটি সাধারণত সত্যনারায়ণ পূজায় বা বিষ্ণু পূজার সময় উচ্চারিত হয়। এটি ঈশ্বরের সর্বব্যাপী, অনন্ত, ও ত্রিগুণময় রূপের প্রতি ভক্তের আত্মসমর্পণের প্রতীক। 🙏

শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ-এর পাঁচালী নমঃ সত্যনারায়ণায় নমঃ সত্য সত্য সত্যপীর সর্ব্বসিদ্ধি দাতা। বাঞ্ছা বড় বাড়িল বর্ণিতে ব্রতকথা।। রসাল রসিক-প্রিয় রমাইব রাগে। বৃন্দারক-বৃন্দকে বন্দনা করি আগে।। গুরুগণ গণেশে করিয়া প্রণিপাত। বন্দোঁ বহ্নি বিপ্র বিধি বিষ্ণু বিশ্বনাথ।। ত্রিসাবিত্রী সিন্ধুপুত্রী সরস্বতী শিবা। ত্রিসন্ধ্যা নক্ষত্র চন্দ্র সূর্য্য রাত্রি দিবা।। 




শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ-এর পাঁচালী ব্যাখ্যা

এই পাঁচালীটি শ্রী সত্যনারায়ণ ভগবানের গুণগান ও তাঁর ব্রতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে। এটি মূলত সত্যনারায়ণ ব্রতকথার সূচনামূলক স্তোত্র, যা পাঠ করার মাধ্যমে ভক্তগণ ঈশ্বরের কৃপা লাভের আশায় তাঁকে বন্দনা করেন।


শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ-এর পাঁচালী

নমঃ সত্যনারায়ণায় নমঃ

 

সত্য সত্য সত্যপীর সর্ব্বসিদ্ধি দাতা।

বাঞ্ছা বড় বাড়িল বর্ণিতে ব্রতকথা।।

রসাল রসিক-প্রিয় রমাইব রাগে।

বৃন্দারক-বৃন্দকে বন্দনা করি আগে।।

গুরুগণ গণেশে করিয়া প্রণিপাত।

বন্দোঁ বহ্নি বিপ্র বিধি বিষ্ণু বিশ্বনাথ।।

ত্রিসাবিত্রী সিন্ধুপুত্রী সরস্বতী শিবা।

ত্রিসন্ধ্যা নক্ষত্র চন্দ্র সূর্য্য রাত্রি দিবা।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "নমঃ সত্যনারায়ণায় নমঃ"
➡️ সত্যনারায়ণকে নমস্কার জানাই।
➡️ এখানে সত্যনারায়ণ ভগবানকে বারবার প্রণাম করা হয়েছে, যা ভক্তির গভীরতা প্রকাশ করে।

🔹 "সত্য সত্য সত্যপীর সর্ব্বসিদ্ধি দাতা।
➡️ সত্য সত্য সত্যপীর—সত্যনারায়ণ পরম সত্য, তিনি সত্যময়।
➡️ সর্বসিদ্ধি দাতা—তিনি ভক্তদের সমস্ত মনোবাসনা পূরণ করেন এবং সিদ্ধি দান করেন।

🔹 "বাঞ্ছা বড় বাড়িল বর্ণিতে ব্রতকথা।।"
➡️ এই ব্রতকথা বর্ণনা করার প্রবল ইচ্ছা হয়েছে।
➡️ ভক্তরা সত্যনারায়ণের ব্রতের মাহাত্ম্য প্রচার করার জন্য আগ্রহী।

🔹 "রসাল রসিক-প্রিয় রমাইব রাগে।
➡️ রসাল (আনন্দময়) ও রসিক-প্রিয় (ভক্তিপূর্ণ গানের প্রতি আসক্ত)।
➡️ রমাইব রাগে—রমা (লক্ষ্মী) যার সঙ্গিনী, সেই ভগবান বিষ্ণু।

🔹 "বৃন্দারক-বৃন্দকে বন্দনা করি আগে।।"
➡️ ভগবান বৃন্দারক (যে বৃন্দাবনের ঈশ্বর) ও দেবতাদের বন্দনা করছি।
➡️ সমস্ত দেবগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

🔹 "গুরুগণ গণেশে করিয়া প্রণিপাত।
➡️ গুরু ও গণেশকে প্রথমে প্রণাম জানাই।
➡️ কারণ যেকোনো শুভ কাজের পূর্বে গুরু ও গণেশের কৃপা গ্রহণ করা হয়।

🔹 "বন্দোঁ বহ্নি বিপ্র বিধি বিষ্ণু বিশ্বনাথ।।"
➡️ বহ্নি (অগ্নি), বিপ্র (ব্রাহ্মণ), বিধি (ব্রহ্মা), বিষ্ণু ও বিশ্বনাথ (শিব)–এঁদের বন্দনা করি।
➡️ সব দেবতাদের সম্মান জানানো হচ্ছে, কারণ তারা সকলেই ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ।

🔹 "ত্রিসাবিত্রী সিন্ধুপুত্রী সরস্বতী শিবা।
➡️ ত্রিসাবিত্রী (ত্রিদেবীর শক্তি), সিন্ধুপুত্রী (লক্ষ্মী), সরস্বতী ও শিবা (পার্বতী)–এঁদের বন্দনা করছি।
➡️ এই দেবীদের আর্শীবাদ ছাড়া কোনো ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন হয় না।

🔹 "ত্রিসন্ধ্যা নক্ষত্র চন্দ্র সূর্য্য রাত্রি দিবা।।"
➡️ ত্রিসন্ধ্যা (ভোর, দুপুর ও সন্ধ্যার প্রার্থনা), নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য, রাত ও দিনকে প্রণাম করছি।
➡️ প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই ঈশ্বরের অংশ, তাই তাদেরও সম্মান জানানো হচ্ছে।


উপসংহার

এই স্তোত্রে ভগবান সত্যনারায়ণ ও তাঁর ব্রতের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এটি পাঠ করলে বা শ্রবণ করলে জীবনে শুভ ফল আসে, পাপ নাশ হয় এবং সর্বসিদ্ধি লাভ করা যায়। এটি মূলত ভক্তদের আত্মসমর্পণ ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। 🙏

কামাখ্যারে করি নতি ধর্ম্মরাজ-যুতা।

সসর্প মনসা বন্দোঁ মহেশের সুতা।।

অষ্ট সিদ্ধি নবগ্রহ দশদিক্‌পাল।

বন্দোঁ বর্ণ পঞ্চাশৎ পরম রসাল।।

প্রণমিব পরাৎপর পদাব্জযুগল।

কূর্ম্মানন্ত অবনী অম্বুধি অষ্টাচল।।

ত্রৈলোক্য তারিণী বন্দোঁ তুলসী-সুন্দরী।

গোলোক প্রভৃতি বন্দোঁ চতু্র্দ্দশ পুরী।।

গঙ্গা আদি তীর্থক্ষেত্রে হইয়া দণ্ডবৎ।

কামরূপ আদি বন্দোঁ পীঠ পঞ্চাশৎ।।

সায়ুধ-বাহন-আবরণ-পরিবার।

দশ মহাবিদ্যা বন্দোঁ দশ অবতার।।

গোকুলে গোবিন্দ বন্দোঁ গোবর্দ্ধন-ধারী।

প্রণমিব প্রভুর প্রেয়সী যত নারী।।


ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

এই স্তোত্রটি বিভিন্ন দেব-দেবীর বন্দনা এবং ব্রহ্মাণ্ডের পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের একটি অংশ। এটি শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতকথার সূচনা পর্যায়ের অংশ, যেখানে সমগ্র জগৎ ও সমস্ত শক্তির প্রতি প্রণাম জানানো হয়েছে।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "কামাখ্যারে করি নতি ধর্ম্মরাজ-যুতা।
➡️ আমি কামাখ্যা দেবীকে প্রণাম জানাই, যিনি ধর্মরাজ (যমরাজ)-এর সঙ্গে যুক্ত।
➡️ কামাখ্যা দেবী শক্তির প্রতীক এবং তন্ত্রসাধনার অন্যতম প্রধান দেবী। তিনি মা দুর্গার এক রূপ।

🔹 "সসর্প মনসা বন্দোঁ মহেশের সুতা।।"
➡️ সাপসহ দেবী মনসাকে বন্দনা করি, যিনি মহেশ্বর (শিব)-এর কন্যা।
➡️ দেবী মনসা সর্পদেবী, যিনি সর্পদংশন থেকে রক্ষা করেন ও সাধকদের সিদ্ধিদাতা।

🔹 "অষ্ট সিদ্ধি নবগ্রহ দশদিক্‌পাল।
➡️ অষ্টসিদ্ধি (আষ্ঠসিদ্ধি-আনিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রকাম্য, ইশিত্য, বসিত্ব ও প্রাপ্তি) এবং নবগ্রহকে প্রণাম।
➡️ দশদিক্‌পাল (দশ দিকের রক্ষক দেবতা) কে বন্দনা করি।
➡️ এই সমস্ত শক্তি জগতে শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং দেবতাদের অনুগ্রহ লাভের মাধ্যমে জীবনে সফলতা আসে।

🔹 "বন্দোঁ বর্ণ পঞ্চাশৎ পরম রসাল।।"
➡️ পঞ্চাশটি সংস্কৃত বর্ণকে (অক্ষরমালা) বন্দনা করি, যেগুলি মহাশক্তির প্রতীক।
➡️ ভাষা ও শব্দের শক্তি ঈশ্বরের এক বিশেষ দান, যা জ্ঞান ও সৃষ্টি পরিচালনা করে।

🔹 "প্রণমিব পরাৎপর পদাব্জযুগল।
➡️ আমি সেই পরমাত্মার চরণযুগলকে প্রণাম করি, যিনি সকলের ঊর্ধ্বে।
➡️ এই চরণযুগল হল পরম ব্রহ্ম বিষ্ণুর প্রতীক।

🔹 "কূর্ম্মানন্ত অবনী অম্বুধি অষ্টাচল।।"
➡️ আমি কূর্ম (কচ্ছপ অবতার), অনন্ত (শেষনাগ), পৃথিবী (অবনী), সমুদ্র (অম্বুধি) ও অষ্টাচল (আটটি পর্বত) কে বন্দনা করি।
➡️ এই সমস্ত উপাদান সৃষ্টির ধারক ও পালনকারী শক্তি।

🔹 "ত্রৈলোক্য তারিণী বন্দোঁ তুলসী-সুন্দরী।
➡️ ত্রিলোকের মুক্তিদাত্রী সুন্দরী তুলসীকে বন্দনা করি।
➡️ তুলসী বিষ্ণুর প্রিয়, তাই তুলসীর পূজা করলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ হয়।

🔹 "গোলোক প্রভৃতি বন্দোঁ চতুর্দ্দশ পুরী।।"
➡️ গোলোক ও চতুর্দশ লোক (ভূলোক, ভুবর্লোক, স্বর্গলোক, মহলোক, জনলোক, তপলোক, সত্যলোক ইত্যাদি) কে বন্দনা করি।
➡️ এই লোকগুলো হল সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর, যেখানে ভগবান বিভিন্ন রূপে অধিষ্ঠিত।

🔹 "গঙ্গা আদি তীর্থক্ষেত্রে হইয়া দণ্ডবৎ।
➡️ গঙ্গা ও অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রে (পবিত্র স্থানে) দণ্ডবৎ প্রণাম করি।
➡️ গঙ্গা সমস্ত পাপ নাশ করে এবং মুক্তির পথপ্রদর্শক।

🔹 "কামরূপ আদি বন্দোঁ পীঠ পঞ্চাশৎ।।"
➡️ কামরূপসহ (অসমের কামাখ্যা পীঠ) ৫০টি শক্তিপীঠকে প্রণাম করি।
➡️ শক্তিপীঠ হল সেইসব স্থান যেখানে দেবী সতীর দেহাংশ পতিত হয়েছিল এবং যেখানে দেবী শক্তির বিশেষ প্রভাব বর্তমান।

🔹 "সায়ুধ-বাহন-আবরণ-পরিবার।
➡️ যে দেবতাদের অস্ত্র, বাহন, আবরণ (বস্ত্র) ও পরিবার আছে, তাদের সবাইকে বন্দনা করি।
➡️ দেবতাদের প্রতিটি অস্ত্র ও বাহন একটি বিশেষ শক্তির প্রতীক।

🔹 "দশ মহাবিদ্যা বন্দোঁ দশ অবতার।।"
➡️ দশ মহাবিদ্যা (দশ শক্তির রূপ যেমন কালী, তারা, ভুবনেশ্বরী, মাতঙ্গী ইত্যাদি) এবং বিষ্ণুর দশ অবতারকে বন্দনা করি।
➡️ এই দশ মহাবিদ্যা ও দশ অবতার জগতের রক্ষা ও পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

🔹 "গোকুলে গোবিন্দ বন্দোঁ গোবর্দ্ধন-ধারী।
➡️ গোকুলের গোবিন্দ (শ্রীকৃষ্ণ) ও গোবর্ধন পাহাড় ধারণকারী কৃষ্ণকে বন্দনা করি।
➡️ কৃষ্ণ লীলাময় ও প্রেমময়, এবং তিনি ভক্তদের রক্ষা করেন।

🔹 "প্রণমিব প্রভুর প্রেয়সী যত নারী।।"
➡️ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল সখী ও পত্নীদের প্রণাম জানাই।
➡️ এই সকল দেবী কৃষ্ণের শক্তির প্রতীক এবং ভক্তদের জন্য আশীর্বাদ প্রদানকারী।


উপসংহার

এই স্তোত্রে সমস্ত শক্তি, দেবতা, তীর্থক্ষেত্র, মহাবিদ্যা, অবতার, এবং জগতের বিভিন্ন পবিত্র রূপের বন্দনা করা হয়েছে। এটি পড়লে বা শ্রবণ করলে জীবনে সমস্ত বাধা দূর হয়, পাপ নাশ হয়, এবং ঈশ্বরের কৃপা লাভ করা যায়। এটি ভক্তদের আত্মসমর্পণ ও ভক্তির এক অনন্য প্রকাশ। 🙏


বলরাম আদি ব্রজ বালক সকল।

বৃন্দাবন-যমুনাদি বিহারের স্থল।।

গো গোপী গোপাল গুরু ব্রজবাসী যত।

রাধাকৃষ্ণ যুগলাদি সখী সখা শত।।

ষষ্ঠী মহাকাল ক্ষেত্রপাল আদি যত।

উপদেব-বৃন্দকে বন্দনা শত শত।।

নম্র হইয়া নবদ্বীপে বন্দিব নিমাই।

পতিতপাবন প্রভু আর কেহ নাই।।

বন্দোঁ বীরভদ্র ধীর নিত্যানন্দ রাম।

প্রেম ধন দান দিয়ে পূর্ণ কৈল কাম।।

প্রণমিব নদ নদী নদের নিমাই ।

বীরভদ্র নিত্যানন্দ শ্রীরূপ গোঁসাই ।।

অদ্বৈত আচার্য্য বন্দোঁ গদাধর পন্ডিত ।

বন্দিয়া শ্রীবাস আদি ভক্তগণ গীত ।।

বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ যতী মােহান্তের গণ ।

যােগী ন্যাসী কর্মী জ্ঞানী গােস্বামী চরণ ।।

বিষ্ণু শৰ্ম্মা বিষ্ণুপ্রিয়া সত্যনারায়ণ ।

ভক্ত ভক্তি ভগবান্ তিন রূপ হন ।।

পতিতপাবন গুরু সত্যনারায়ণ ।

যাহার কৃপায় তরে এ তিন ভূবন ।।

ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

এই স্তোত্রটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম, বৃন্দাবনের বাসিন্দা, গোপ-গোপী, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ, বৈষ্ণব গুরু এবং সত্যনারায়ণের বন্দনায় রচিত হয়েছে। এটি বৈষ্ণব ভক্তির এক অপূর্ব প্রকাশ, যেখানে কৃষ্ণ-ভক্তির পাশাপাশি গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মহাপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "বলরাম আদি ব্রজ বালক সকল।
বৃন্দাবন-যমুনাদি বিহারের স্থল।।"

➡️ বলরাম এবং ব্রজের সকল বালকদের বন্দনা করি।
➡️ বৃন্দাবন ও যমুনা নদী হল কৃষ্ণ-বলরামের লীলাক্ষেত্র।
➡️ বলরাম কৃষ্ণের বড় দাদা ও শক্তির অবতার, যিনি কৃষ্ণের লীলা রক্ষা করেন।

🔹 "গো গোপী গোপাল গুরু ব্রজবাসী যত।
রাধাকৃষ্ণ যুগলাদি সখী সখা শত।।"

➡️ গো (গরু), গোপী, গোপাল এবং বৃন্দাবনের সকল বাসিন্দাকে বন্দনা করি।
➡️ রাধাকৃষ্ণ ও তাঁদের অসংখ্য সখা-সখীদের বন্দনা করি।
➡️ গোপালরা হলেন শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গী, এবং রাধাকৃষ্ণ হলেন পরম প্রেম ও ভক্তির প্রতীক।

🔹 "ষষ্ঠী মহাকাল ক্ষেত্রপাল আদি যত।
উপদেব-বৃন্দকে বন্দনা শত শত।।"

➡️ ষষ্ঠী দেবী, মহাকাল, ক্ষেত্রপাল এবং অন্যান্য উপদেবতাদের শত শত প্রণাম।
➡️ ষষ্ঠী দেবী শিশুদের রক্ষা করেন, ক্ষেত্রপাল হলেন ভূমির রক্ষক, মহাকাল মহাদেবের এক রূপ।

🔹 "নম্র হইয়া নবদ্বীপে বন্দিব নিমাই।
পতিতপাবন প্রভু আর কেহ নাই।।"

➡️ নম্র হয়ে নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (নিমাই) কে বন্দনা করি।
➡️ তিনি পতিতপাবন (পাপীদের উদ্ধারকর্তা), তাঁর মতো আর কেউ নেই।
➡️ চৈতন্য মহাপ্রভু হলেন কৃষ্ণের অবতার, যিনি হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে ভক্তিকে প্রচার করেছেন।

🔹 "বন্দোঁ বীরভদ্র ধীর নিত্যানন্দ রাম।
প্রেম ধন দান দিয়ে পূর্ণ কৈল কাম।।"

➡️ বীরভদ্র (শিবের পুত্র) ও ধীরনিত্যানন্দ রামকে বন্দনা করি।
➡️ নিত্যানন্দ প্রভু প্রেমধন (ভক্তি) দান করে সকলের কামনা পূর্ণ করেছেন।
➡️ নিত্যানন্দ চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান পার্ষদ ও তাঁর করুণা-প্রদাতা রূপ।

🔹 "প্রণমিব নদ নদী নদের নিমাই ।
বীরভদ্র নিত্যানন্দ শ্রীরূপ গোঁসাই ।।"

➡️ নদ-নদী, নিমাই (চৈতন্য), বীরভদ্র, নিত্যানন্দ এবং শ্রীরূপ গোস্বামীকে প্রণাম করি।
➡️ শ্রীরূপ গোস্বামী ছিলেন বৈষ্ণব আচার্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুরু।

🔹 "অদ্বৈত আচার্য্য বন্দোঁ গদাধর পন্ডিত।
বন্দিয়া শ্রীবাস আদি ভক্তগণ গীত।।"

➡️ অদ্বৈত আচার্য ও গদাধর পণ্ডিতকে বন্দনা করি।
➡️ শ্রীবাস ঠাকুরসহ অন্যান্য ভক্তদের বন্দনা করি।
➡️ অদ্বৈত আচার্য ছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর অবতারণের অন্যতম কারণ, গদাধর পণ্ডিত তাঁর ঘনিষ্ঠ পার্ষদ।

🔹 "বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ যতী মোহান্তের গণ।
যোগী ন্যাসী কর্মী জ্ঞানী গোস্বামী চরণ।।"

➡️ বৈষ্ণব, ব্রাহ্মণ, সন্ন্যাসী, মোহান্ত, যোগী, জ্ঞানী, কর্মী এবং গোস্বামীদের চরণে বন্দনা করি।
➡️ বৈষ্ণব ও গুরুদের আশীর্বাদ ছাড়া ভক্তির পথ অগ্রসর হয় না।

🔹 "বিষ্ণু শৰ্ম্মা বিষ্ণুপ্রিয়া সত্যনারায়ণ।
ভক্ত ভক্তি ভগবান্ তিন রূপ হন।।"

➡️ বিষ্ণুশর্মা, বিষ্ণুপ্রিয়া এবং সত্যনারায়ণকে বন্দনা করি।
➡️ ভক্ত, ভক্তি এবং ভগবান—এই তিনটি রূপ একত্রে থাকে।
➡️ বিষ্ণুপ্রিয়া ছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর পত্নী, আর সত্যনারায়ণ হলেন বিষ্ণুর এক বিশেষ রূপ।

🔹 "পতিতপাবন গুরু সত্যনারায়ণ।
যাহার কৃপায় তরে এ তিন ভূবন।।"

➡️ পতিতপাবন গুরু সত্যনারায়ণকে বন্দনা করি।
➡️ যাঁর কৃপায় এই তিন ভুবন (স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল) উদ্ধার হয়।
➡️ সত্যনারায়ণ হলেন এমন এক রূপ, যিনি ভক্তদের কষ্ট নাশ করেন এবং জীবনকে শুদ্ধ ও পূর্ণ করেন।


উপসংহার

এই স্তোত্রে বৃন্দাবন, নবদ্বীপ, বৈষ্ণব গুরু, সাধু-সন্ন্যাসী, ভক্তগণ ও সত্যনারায়ণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এটি বৈষ্ণব ধর্মের মূল ভাবনা—ভক্তি, ভগবান ও ভক্তের সম্পর্ককে তুলে ধরে। নিয়মিত এই স্তোত্র পাঠ করলে ঈশ্বরের কৃপা লাভ হয়, পাপ নাশ হয় এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে। 🙏

ব্রহ্মাদ্যাদি সৰ্ব্বশক্তি পরা শক্তি দাত্রী ।

চন্ডচামুন্ডা চন্ডিকা দুর্গা শিবদূতী ।।

অপ্সরী কিন্নরী বন্দোঁ ডাকিনী যােগিনী ।

ছয় রাগ ছয় ঋতু ছত্রিশ রাগিনী ।।

বন্দো বেদ বেদাঙ্গ বেদান্ত বিদ্যাগণ ।

যত ব্ৰহ্ম ঋষি দেব মুনির চরণ ।।

অতঃপর বন্দিব রহিম রামরূপ ।

ত্রিদশের চতুর্দশ ভূবনের ভূপ ।।

কোরাণ কেতাব্ আর কলমা সংহতি ।

সুফি খাঁ পীরের পায় প্রচুর প্রণতি ।।

সাত শত আউলিয়া বন্দি কর জোড়ে ।

ফণীন্দ্র নগেন্দ্র ইন্দ্র কাপে যা’র ডরে ।।

পরে সত্যপীর বন্দোঁ বলে দ্বিজ রাম ।

সাকিন বরদা বাটী যদুপুর গ্রাম ।

ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

এই স্তোত্রটি এক অনন্য ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক রচনা, যেখানে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সাধু-সন্ত, দেব-দেবী, ঋষি-মুনিদের পাশাপাশি সত্যপীরের বন্দনা করা হয়েছে। এটি মূলত ধর্মীয় সমন্বয়ের প্রতীক, যা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "ব্রহ্মাদ্যাদি সৰ্ব্বশক্তি পরা শক্তি দাত্রী।
চন্ডচামুন্ডা চন্ডিকা দুর্গা শিবদূতী।।"

➡️ ব্রহ্মা থেকে শুরু করে সকল শক্তি এবং পরাশক্তি দানকারিণী দেবীদের বন্দনা করি।
➡️ চণ্ডচামুণ্ডা (দুর্গার এক ভয়ঙ্কর রূপ), চণ্ডিকা (দুর্গার অপর নাম), দুর্গা ও শিবদূতীর বন্দনা করি।
➡️ দুর্গা মহাশক্তির প্রতীক, যিনি দেবতাদের রক্ষা করেন এবং অসুরদের বিনাশ করেন।

🔹 "অপ্সরী কিন্নরী বন্দোঁ ডাকিনী যোগিনী।
ছয় রাগ ছয় ঋতু ছত্রিশ রাগিনী।।"

➡️ অপ্সরা, কিন্নর, ডাকিনী ও যোগিনীদের বন্দনা করি।
➡️ সংগীতের ছয়টি মূল রাগ, ছয় ঋতু ও ছত্রিশ রাগিনীকেও প্রণাম।
➡️ ডাকিনী-যোগিনী শক্তির প্রতীক, এবং সংগীতও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের একটি মাধ্যম।

🔹 "বন্দো বেদ বেদাঙ্গ বেদান্ত বিদ্যাগণ।
যত ব্রহ্ম ঋষি দেব মুনির চরণ।।"

➡️ বেদ, বেদাঙ্গ, বেদান্ত এবং সকল জ্ঞানবিজ্ঞানকে বন্দনা করি।
➡️ ব্রহ্মা, ঋষি, দেবতা ও মুনিদের চরণে প্রণাম করি।
➡️ বেদ হলো জ্ঞানের আধার, যা বৈদিক সভ্যতার মূল ভিত্তি।

🔹 "অতঃপর বন্দিব রহিম রামরূপ।
ত্রিদশের চতুর্দশ ভূবনের ভূপ।।"

➡️ এরপর রহিম ও রাম—উভয়কে বন্দনা করি।
➡️ ত্রিদশ (ত্রিশ দেবতা) ও চতুর্দশ (চৌদ্দ লোকের) রাজাকে প্রণাম করি।
➡️ এখানে ঈশ্বরের দুই রূপ—হিন্দুদের রাম ও মুসলিমদের রহিমকে একই সঙ্গে বন্দনা করা হয়েছে, যা ধর্মীয় সমন্বয়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

🔹 "কোরাণ কেতাব্ আর কলমা সংহতি।
সুফি খাঁ পীরের পায় প্রচুর প্রণতি।।"

➡️ কোরআন, কেতাব ও কলমাকে শ্রদ্ধা জানাই।
➡️ সুফি-সন্তদের প্রতি গভীর প্রণাম করি।
➡️ ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ এবং সুফি সাধকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

🔹 "সাত শত আউলিয়া বন্দি কর জোড়ে।
ফণীন্দ্র নগেন্দ্র ইন্দ্র কাপে যা’র ডরে।।"

➡️ সাতশো আউলিয়া (মুসলিম পীর ও সাধক) বিনম্রচিত্তে বন্দনা করি।
➡️ যাঁদের শক্তিতে ইন্দ্রও ভীত হয়।
➡️ আউলিয়া বলতে সুফি দরবেশদের বোঝায়, যাঁরা ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত ছিলেন।

🔹 "পরে সত্যপীর বন্দোঁ বলে দ্বিজ রাম।
সাকিন বরদা বাটী যদুপুর গ্রাম।।"

➡️ অবশেষে সত্যপীরের বন্দনা করি, বলে দ্বিজ রাম।
➡️ সাকিন বরদা বাটি ও যদুপুর গ্রামকে প্রণাম করি।
➡️ সত্যপীর হলেন এক বিশেষ সাধু, যিনি হিন্দু ও মুসলিমদের সম্মিলিত উপাস্যের প্রতীক। তিনি ভক্তদের ইহলোক ও পরলোকের কল্যাণ করেন।


উপসংহার

এই স্তোত্রটি হিন্দু ও মুসলিম সাধনা ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য সমন্বয়। এটি প্রমাণ করে যে ভক্তির কোনো সীমারেখা নেই—সকল ধর্মই এক পরম সত্যের দিকে ধাবিত হয়। সত্যনারায়ণ ব্রত এবং সত্যপীর উপাসনা একইসঙ্গে পালিত হয়, যা বাংলার ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই স্তোত্র পাঠ করলে ভক্তের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে এবং ঈশ্বরের কৃপা লাভ হয়। 🙏

জয় জয় সত্যপীর,      সনাতন দস্তগীড়,

দেব দেব জগতের নাথ ।

কে জানে তােমার তত্ত্ব,  তুমি রজঃ তমঃ সত্ত্ব

তােমার চরণে প্রণিপাত

সৰ্ব্বভূতে সৰ্বময়,             চারু চরাচরচয়,

চন্দ্রচূড় – চিন্ত্য চিন্তামণি ।

পূৰ্বে হয়ে দশমূৰ্ত্তি,    করিলে অকথ্য কীর্তি,

সত্যপীর হইলে ইদানী ।।

ছয় দরশনে কয়,        এক ব্ৰহ্ম দুই নয়,

জন্ম জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম ।।

কলিতে যবন দুষ্ট,       হৈন্দবী করিল নষ্ট,

দেখিয়া রহিম হইলা রাম।

ভক্তের কারণে হরি,       রহিমের বেশ ধরি,

দুষ্টে দেখি দূরে পরিহার ।।

ব্রাহ্মণে বলিয়া ভেদ,       ঘুচালে মনের খেদ,

রক্ষা কৈলে সৃষ্টি আপনার ।।

এক মনে অল্প ধনে,  যে তােমারে সির্ণি মানে,

হাসিল্ করহ তার কাম ।।


"জয় জয় সত্যপীর" স্তোত্রের ব্যাখ্যা

এই স্তোত্রটি ধর্মীয় একত্ববাদ ও আধ্যাত্মিক সমন্বয়ের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে সত্যপীরকে সনাতন ও ইসলামের এক মিলিত রূপে বন্দনা করা হয়েছে। এটি বাংলার লোকসংস্কৃতিতে জনপ্রিয় সত্যপীর উপাসনার অন্যতম প্রামাণ্য দলিল।


শ্লোকের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

🔹 "জয় জয় সত্যপীর, সনাতন দস্তগীড়, দেব দেব জগতের নাথ।"
➡️ সত্যপীরের জয়গান করা হচ্ছে, যিনি সনাতন ও ইসলাম উভয়ের উপাস্য।
➡️ তিনি দেবতাদেরও দেবতা এবং সমগ্র বিশ্বজগতের নাথ (প্রভু)।

🔹 "কে জানে তােমার তত্ত্ব, তুমি রজঃ তমঃ সত্ত্ব, তােমার চরণে প্রণিপাত।"
➡️ সত্যপীরের প্রকৃত তত্ত্ব বা রহস্য বোঝা কঠিন, কারণ তিনি রজঃ, তমঃ এবং সত্ত্ব—তিনটি গুণের সমন্বয়ে গঠিত।
➡️ তাঁর চরণে নত হয়ে প্রণাম জানানো হচ্ছে।

🔹 "সৰ্ব্বভূতে সৰ্বময়, চারু চরাচরচয়, চন্দ্রচূড় – চিন্ত্য চিন্তামণি।"
➡️ সত্যপীর সমস্ত জীবের মধ্যে বিরাজমান এবং তিনি সমগ্র সৃষ্টিতে সর্বময়।
➡️ চন্দ্রচূড় (শিবের আরেক নাম) এবং চিন্তামণির মতো, যিনি সমস্ত কামনা পূরণ করেন।

🔹 "পূৰ্বে হয়ে দশমূৰ্ত্তি, করিলে অকথ্য কীর্তি, সত্যপীর হইলে ইদানী।"
➡️ সত্যপীর পূর্বে দশমূর্তি ধারণ করেছিলেন এবং তিনি অতীতে অসংখ্য অলৌকিক কীর্তি করেছেন।
➡️ এখন তিনি সত্যপীর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।

🔹 "ছয় দরশনে কয়, এক ব্ৰহ্ম দুই নয়, জন্ম জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম।"
➡️ দর্শনশাস্ত্রের ছয়টি মতবাদ (ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, মীমাংসা ও বেদান্ত) একটিই সত্য বলে, যা হলো—এক ব্রহ্ম।
➡️ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়, যদিও বিভিন্ন জন্মে ও সংস্কৃতিতে তাঁর নাম বিভিন্ন হয়।

🔹 "কলিতে যবন দুষ্ট, হৈন্দবী করিল নষ্ট, দেখিয়া রহিম হইলা রাম।"
➡️ কলিযুগে কিছু দুরাচার যবন (অর্থাৎ অনাচারী মুসলমান) ও কিছু হিন্দু ধর্মীয় গোঁড়ামি সৃষ্টি করে।
➡️ এটি দেখে ঈশ্বর স্বয়ং রহিম ও রামের রূপ ধারণ করলেন, অর্থাৎ তিনি সকল ধর্মের মানুষকে রক্ষা করলেন।

🔹 "ভক্তের কারণে হরি, রহিমের বেশ ধরি, দুষ্টে দেখি দূরে পরিহার।।"
➡️ ভক্তদের রক্ষার জন্য হরি (বিষ্ণু) রহিমের বেশ ধরেন, অর্থাৎ সত্যপীরের রূপ নেন।
➡️ তিনিই সকল ধর্মের ঈশ্বর এবং দুষ্টদের পরিহার করেন।

🔹 "ব্রাহ্মণে বলিয়া ভেদ, ঘুচালে মনের খেদ, রক্ষা কৈলে সৃষ্টি আপনার।।"
➡️ সত্যপীর বুঝিয়ে দিলেন যে ব্রাহ্মণ বা জাতিগত ভেদাভেদ ভিত্তিহীন।
➡️ তিনি মানুষের মনের বিভেদ দূর করে সৃষ্টিকে রক্ষা করেছেন।

🔹 "এক মনে অল্প ধনে, যে তােমারে সির্ণি মানে, হাসিল্ করহ তার কাম।।"
➡️ যে ভক্ত অল্প অর্থ দিয়েও একাগ্র চিত্তে সত্যপীরের উপাসনা করে এবং তাঁর নামে শিন্নি (ভোগ) প্রদান করে, তার সমস্ত কামনা পূরণ হয়।


উপসংহার

এই স্তোত্রে সত্যপীরকে এমন এক সর্বজনীন ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের উপাস্য। তিনি সকলের মধ্যে বিরাজমান এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান করেন।

এই স্তোত্রটি বাংলার ভক্তিমূলক ধারার অন্যতম একটি জনপ্রিয় সৃষ্টি, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন। সত্যপীরের উপাসনা করলে ভক্তরা আশীর্বাদ ও কল্যাণ লাভ করে। 🙏


আমি অতি মূঢ় মতি   কি জানি ভকতি স্তুতি,

নিজ গুণে পূর গুণধাম ।।

তােমার সেবাতে হয়        হৃদয়ের গ্রন্থি ক্ষয়,

তােমা বিনা কিছু নাহি জানে ।

সদানন্দে হয়ে লীন        তােমার প্রেমেরধীন,

পরাপর সেবাগত ধ্যানে ।।

দরিদ্র দ্বিজের কাছে,     পূৰ্ব্বকালে সৰ্ত্ত আছে

আত্মবাক্য পালিবে আপনি ।

নায়কেরে হ’য়ে তুষ্টি    সির্ণিতে করহ দৃষ্টি,

শুন আপনার ব্রত বাণী ।।

দুঃখ বিনাশিনী তথা,     তােমার মঙ্গল কথা,

যে গায় গাওয়ায় কিংবা শােনে ।

তুমি রক্ষা কর তারে     মহামারে মহাঘােরে

রণে, বনে, রিপু সন্নিধানে ।।

দৃঢ়ভক্তি হয় যার,        পাতক না থাকে তার

মনােরথ সিদ্ধি হাতে হাতে ।

কহে দ্বিজ রামেশ্বর        শুদ্ধভাবে শুন নর,

হরি বল পীরের পীরিতে ।।

ভক্তির নিবেদন ও সত্যনারায়ণের কৃপা

এই স্তবগীতি সত্যনারায়ণের প্রতি এক নিবেদনমূলক প্রার্থনা, যেখানে ভক্ত তাঁর অজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধতার স্বীকারোক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কৃপা ও দয়া কামনা করেছেন। এটি ভক্তি, আত্মসমর্পণ ও ঈশ্বরের করুণার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে।


শ্লোক ব্যাখ্যা

🔹 "আমি অতি মূঢ় মতি, কি জানি ভকতি স্তুতি,
নিজ গুণে পূর গুণধাম।।"

➡️ আমি অত্যন্ত মূর্খ ও নির্বোধ, তাই ভক্তি বা স্তবগান সম্পর্কে কিছুই জানি না।
➡️ তবুও, হে গুণধাম (গুণের আধার), তুমি নিজ গুণে আমার পূজাকে গ্রহণ করো।

🔹 "তােমার সেবাতে হয়, হৃদয়ের গ্রন্থি ক্ষয়,
তােমা বিনা কিছু নাহি জানে।।"

➡️ তোমার সেবায় অন্তরের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হয়।
➡️ যে তোমার উপাসনায় লীন, সে আর কিছু জানে না—শুধু তোমাতেই একীভূত হয়।

🔹 "সদানন্দে হয়ে লীন, তােমার প্রেমের ধীন,
পরাপর সেবাগত ধ্যানে।।"

➡️ ভক্ত চিরআনন্দে লীন হয়ে যায়, তোমার প্রেমের বাঁধনে আবদ্ধ হয়।
➡️ এবং চূড়ান্ত ধ্যানে, পরম সেবায় রত থাকে।

🔹 "দরিদ্র দ্বিজের কাছে, পূৰ্ব্বকালে সৰ্ত্ত আছে
আত্মবাক্য পালিবে আপনি।।"

➡️ পূর্বকালে দরিদ্র দ্বিজ (ব্রাহ্মণ) তোমার প্রতি যে শপথ বা সংকল্প করেছিল, তুমি নিজেই তা পালন করেছিলে।
➡️ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে ভক্ত যদি তাঁর শরণ নেয়, তাহলে তিনি কখনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না।

🔹 "নায়কেরে হ’য়ে তুষ্টি, সির্ণিতে করহ দৃষ্টি,
শুন আপনার ব্রত বাণী।।"

➡️ যদি কেউ সামান্য প্রসাদ (সির্ণি) দিয়েও তোমার সন্তুষ্টি কামনা করে, তুমি কৃপাদৃষ্টি দাও।
➡️ এটি সত্যনারায়ণ ব্রতের মূল তত্ত্বের প্রতিফলন, যেখানে সামান্য দান ও ভক্তিই পরম ফল প্রদান করে।

🔹 "দুঃখ বিনাশিনী তথা, তােমার মঙ্গল কথা,
যে গায় গাওয়ায় কিংবা শােনে।।"

➡️ যে তোমার মঙ্গলময় কথা গায়, গাওয়ায় বা শ্রবণ করে, তার সমস্ত দুঃখ বিনাশ হয়।
➡️ এখানে সত্যনারায়ণ কীর্তনের মাহাত্ম্য প্রকাশ পেয়েছে।

🔹 "তুমি রক্ষা কর তারে, মহামারে মহাঘােরে,
রণে, বনে, রিপু সন্নিধানে।।"

➡️ তুমি তাঁর রক্ষা করো—যে মহামারি, মহাসঙ্কট, যুদ্ধ, বনে বা শত্রুর নিকটে বিপদগ্রস্ত হয়।
➡️ এটি ঈশ্বরের সর্বত্র উপস্থিতি ও তাঁর আশ্রয়ের শক্তি বোঝায়।

🔹 "দৃঢ়ভক্তি হয় যার, পাতক না থাকে তার
মনােরথ সিদ্ধি হাতে হাতে।।"

➡️ যার দৃঢ় ভক্তি আছে, তার কোনো পাপ থাকে না।
➡️ তার সমস্ত ইচ্ছা দ্রুত পূর্ণ হয়।

🔹 "কহে দ্বিজ রামেশ্বর, শুদ্ধভাবে শুন নর,
হরি বল পীরের পীরিতে।।"

➡️ দ্বিজ রামেশ্বর বলছেন, হে মানুষ! শুদ্ধ মনে এই কথা শুনো।
➡️ ভগবান হরির নাম করো, কারণ তিনিই পীরদেরও পীর, সর্বোচ্চ মহাপুরুষ।


মূল বার্তা

ভক্তি ও আত্মসমর্পণের গুরুত্ব:
➡️ ভক্ত যতই অজ্ঞ বা সাধারণ হোক না কেন, যদি সে ঈশ্বরের শরণ নেয়, তাহলে সত্যনারায়ণ তার রক্ষা করবেন।

সত্যনারায়ণ ব্রতের মাহাত্ম্য:
➡️ সামান্য প্রসাদ (সির্ণি) নিবেদন করলেও সত্যনারায়ণ প্রসন্ন হন।

কীর্তনের শক্তি:
➡️ সত্যনারায়ণের নাম গাওয়া, শুনা বা প্রচার করলে সমস্ত দুঃখ, বিপদ দূর হয়।

সঙ্কট থেকে মুক্তি:
➡️ সত্যনারায়ণের আশ্রয়ে থাকলে, যুদ্ধে, বনে, মহামারিতে বা শত্রুর সামনে কেউ ভয় পায় না।

পাপ বিনাশ ও মনোবাঞ্ছা পূরণ:
➡️ দৃঢ় ভক্তির মাধ্যমে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং ইচ্ছাগুলো দ্রুত পূর্ণ হয়।

এই স্তোত্রটি সত্যনারায়ণের প্রতি গভীর বিশ্বাস, ভক্তির মাহাত্ম্য ও তাঁর অসীম কৃপা প্রকাশ করে। 🙏

সিৰ্ণি দিয়ে শুদ্ধ ভাবে,  পূজিলে বাঞ্ছিত লভে

পুত্র, দারা, অর্থ, ঘােড়া, দোলা ।

ভনে দ্বিজ রামেশ্বর,     বুঝে কাৰ্য্য কর নর,

শুন প্রভুর অষ্ট মঙ্গলা ।।

কলিতে প্রথম তত্ত্ব ফকিরত্ব কায়া ।

দ্বিতীয়ে দরিদ্র দ্বিজে দিলে পদ ছায়া ।।

তৃতীয়ে ত্রিবিধ লােক করিলে নিস্তার ।

চতুর্থে উৎকট কষ্ট নষ্ট কাঠুরার ।।

কন্যা জন্য মাননে পঞ্চমে পরাৎপর ।

সদানন্দ সাধুকে সংকটে দিলা বর ।।

পাসরণে প্রতিফল বন্ধন বিদেশে ।

যষ্ঠে তুষ্ট হয়ে কষ্ট দূর কৈলা শেষে ।।

সপ্তমে সাধুর সঙ্গে পথে দরশন ।

অষ্টমে অবলার অহংকার মােচন ।।

কত ঠাঁই ঠাকুরালী করিয়া প্রচুর ।

দরিদ্রের দুঃখ ক্লেশ কত কৈলা দূর ।।

বংশধ্বজ নৃপতির দর্প চূর্ণ করি ।

গােপগণ সঙ্গে পূজা করাইলা হরি ।।

সত্যনারায়ণ ব্রতের মাহাত্ম্য ও অষ্ট মঙ্গলা কাহিনী

এই স্তোত্রটি সত্যনারায়ণের পূজার ফল এবং তাঁর কৃপা কাহিনীগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করে। এখানে আটটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা "অষ্ট মঙ্গলা" তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে সত্যনারায়ণের কৃপায় ভক্তরা মুক্তি পেয়েছে এবং ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।


পূজার মাহাত্ম্য

🔹 "সিৰ্ণি দিয়ে শুদ্ধ ভাবে, পূজিলে বাঞ্ছিত লভে
পুত্র, দারা, অর্থ, ঘোড়া, দোলা।"

➡️ যদি কেউ শুদ্ধভাবে সির্ণি (সত্যনারায়ণের প্রসাদ) নিবেদন করে পূজা করে, তবে সে তার মনোবাসনা লাভ করে—পুত্র, স্ত্রী, ধন, বাহন (ঘোড়া, দোলার মতো সমৃদ্ধি)।

🔹 "ভনে দ্বিজ রামেশ্বর, বুঝে কাৰ্য্য কর নর,
শুন প্রভুর অষ্ট মঙ্গলা।।"

➡️ দ্বিজ রামেশ্বর বলছেন—হে মানুষ! বুঝে কাজ করো, প্রভুর অষ্ট মঙ্গলার কাহিনি শ্রবণ করো।


অষ্ট মঙ্গলা: সত্যনারায়ণের আটটি কৃপা কাহিনি

১️⃣ প্রথম মঙ্গল:
🔹 "কলিতে প্রথম তত্ত্ব ফকিরত্ব কায়া।"
➡️ কলিযুগে সত্যনারায়ণ প্রথমবার তাঁর মহিমা প্রকাশ করেন ফকির রূপে।

২️⃣ দ্বিতীয় মঙ্গল:
🔹 "দ্বিতীয়ে দরিদ্র দ্বিজে দিলে পদ ছায়া।।"
➡️ দরিদ্র ব্রাহ্মণের কষ্ট দূর করে তাকে আশ্রয় দেন।

৩️⃣ তৃতীয় মঙ্গল:
🔹 "তৃতীয়ে ত্রিবিধ লােক করিলে নিস্তার।।"
➡️ তিন ধরনের মানুষ—দরিদ্র, গৃহস্থ ও রাজা—সত্যনারায়ণের কৃপায় উদ্ধার পান।

৪️⃣ চতুর্থ মঙ্গল:
🔹 "চতুর্থে উৎকট কষ্ট নষ্ট কাঠুরার।।"
➡️ কাঠুরিয়া একদিন সত্যনারায়ণের প্রসাদ গ্রহণ করে এবং তার সকল দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়।

৫️⃣ পঞ্চম মঙ্গল:
🔹 "কন্যা জন্য মাননে পঞ্চমে পরাৎপর।।"
➡️ এক ধনী ব্যক্তি সত্যনারায়ণের কৃপায় তার কন্যার জন্য উপযুক্ত বর পায়।

৬️⃣ ষষ্ঠ মঙ্গল:
🔹 "সদানন্দ সাধুকে সংকটে দিলা বর।।"
➡️ সদানন্দ নামে এক সাধু সংকটে পড়লে সত্যনারায়ণ তাকে কৃপাদৃষ্টি দেন।

🔹 "পাসরণে প্রতিফল বন্ধন বিদেশে।।
ষষ্ঠে তুষ্ট হয়ে কষ্ট দূর কৈলা শেষে।।"

➡️ ষষ্ঠ ঘটনায় সত্যনারায়ণ এক বিদেশী ব্যবসায়ীর বন্ধনমুক্তি ও দুঃখ নিবারণ করেন।

৭️⃣ সপ্তম মঙ্গল:
🔹 "সপ্তমে সাধুর সঙ্গে পথে দরশন।।"
➡️ এক সাধু পথে চলার সময় সত্যনারায়ণের দর্শন পান, যা তার ভাগ্য পরিবর্তন করে।

৮️⃣ অষ্টম মঙ্গল:
🔹 "অষ্টমে অবলার অহংকার মোচন।।"
➡️ এক গর্বিত নারী সত্যনারায়ণের কৃপায় অহংকার ত্যাগ করে এবং মুক্তি লাভ করে।


অন্য ঘটনার উল্লেখ

🔹 "কত ঠাঁই ঠাকুরালী করিয়া প্রচুর।
দরিদ্রের দুঃখ ক্লেশ কত কৈলা দূর।।"

➡️ সত্যনারায়ণ বহু জায়গায় ভক্তদের দুঃখ মোচন করেছেন এবং তাদের কষ্ট লাঘব করেছেন।

🔹 "বংশধ্বজ নৃপতির দর্প চূর্ণ করি।
গোপগণ সঙ্গে পূজা করাইলা হরি।।"

➡️ অহংকারী রাজা বংশধ্বজের অহংকার চূর্ণ করে সত্যনারায়ণ তাঁর প্রকৃত শক্তি দেখান এবং গোপগণের সঙ্গে পুজা করেন।


মূল শিক্ষা ও বার্তা

সত্যনারায়ণ পূজার ফল:
➡️ শুদ্ধ চিত্তে সত্যনারায়ণ ব্রত পালন করলে মানুষ ধন-সম্পদ, পুত্র, স্ত্রী, সুখ-শান্তি লাভ করে।

অহংকারের বিনাশ:
➡️ অহংকারী ব্যক্তি সত্যনারায়ণের কৃপায় নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং পরিশুদ্ধ হয়।

দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি করুণা:
➡️ সত্যনারায়ণ দরিদ্রদের দুঃখ দূর করেন এবং তাদের জীবন সমৃদ্ধ করেন।

ভক্তির মাহাত্ম্য:
➡️ যাঁরা সত্যনারায়ণের উপাসনা করেন, তাঁরা সব সংকট থেকে মুক্ত হন এবং তাদের ইচ্ছা পূর্ণ হয়।

এই স্তোত্রটি সত্যনারায়ণের অষ্ট মঙ্গলা কাহিনি ও তাঁর করুণার গুরুত্ব বোঝায়, যা ভক্তদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার জন্ম দেয়। 🙏


পরে তুষ্ট হয়ে তারে দিলে পরম স্থান ।

সত্যনারায়ণ হন দয়ার নিদান ।।

পুত্ৰার্থীরে পুত্র দেয় ধনার্থীরে ধন ।

দয়াৰ্থী সদাই সেবে সত্যের চরণ ।।

তুমি প্রভু দয়াসিন্ধু মহিমা সাগর ।

কি বলিতে পারি প্রভু আমি তুচ্ছ নর ।।

আপনি রচিলে নাথ আপন কীৰ্ত্তন ।

মাের দোষ ক্ষম, দেহ চরণে শরণ ।।

নায়কে কল্যাণ কর গায়কে সুস্বর ।

আসর সহিতে সত্যপীর দেহ বর ।।

পূজার দক্ষিণা দিবে, না হবে কাতর ।

তবে দয়া করিবেন পীর পয়গম্বর ।।

গ্রন্থ সাঁঙ্গ হৈল বিরচিল দ্বিজ রাম ।

সবে হরি ধ্বনি কর মুজ্ রা সেলাম ।।

সত্যনারায়ণ ব্রতের পরম ফল ও দয়ার নিদান

এই স্তোত্রটি সত্যনারায়ণের দয়া, ভক্তদের প্রতি তাঁর কৃপা, এবং ব্রতের মাহাত্ম্য তুলে ধরে। এখানে বলা হয়েছে, সত্যনারায়ণ ব্রত পালনের মাধ্যমে ভক্তরা সকল ইচ্ছা পূরণ করতে পারে এবং পরম মোক্ষ লাভ করতে পারে।


সত্যনারায়ণের দয়ার কৃপা

🔹 "পরে তুষ্ট হয়ে তারে দিলে পরম স্থান।
সত্যনারায়ণ হন দয়ার নিদান।।"

➡️ সত্যনারায়ণ ভক্তদের তুষ্ট হয়ে তাঁদের পরম মোক্ষ প্রদান করেন। তিনি দয়ার আধার।

🔹 "পুত্রার্থীরে পুত্র দেয় ধনার্থীরে ধন।
দয়াৰ্থী সদাই সেবে সত্যের চরণ।।"

➡️ যারা সন্তান কামনা করে, তারা পুত্র লাভ করে, যারা ধন চায়, তারা ধন লাভ করে।
➡️ দয়ার্থীরা সর্বদা সত্যনারায়ণের চরণ সেবা করে এবং কৃপা লাভ করে।


সত্যনারায়ণের অনন্ত করুণা

🔹 "তুমি প্রভু দয়াসিন্ধু মহিমা সাগর।
কি বলিতে পারি প্রভু আমি তুচ্ছ নর।।"

➡️ সত্যনারায়ণ দয়ার মহাসমুদ্র, তাঁর মহিমা অসীম।
➡️ একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, আমি তাঁর গুণগান কীভাবে গাইব!

🔹 "আপনি রচিলে নাথ আপন কীৰ্ত্তন।
মাের দোষ ক্ষম, দেহ চরণে শরণ।।"

➡️ সত্যনারায়ণ নিজেই তাঁর কীর্তন রচনা করেন, যা ভক্তদের পরম শান্তি দেয়।
➡️ আমি ভুল করলেও, হে প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আপনার চরণে শরণ দিন।


ভক্তদের কল্যাণ ও আশীর্বাদ

🔹 "নায়কে কল্যাণ কর গায়কে সুস্বর।
আসর সহিতে সত্যপীর দেহ বর।।"

➡️ সত্যনারায়ণ ভক্তদের কল্যাণ করেন এবং যাঁরা গান গেয়ে তাঁর মহিমা প্রচার করেন, তাঁদের সুন্দর কণ্ঠ দান করেন।
➡️ এই সত্যপীরের আসর যেন শুভভাবে পরিচালিত হয়, সেই বর দিন।

🔹 "পূজার দক্ষিণা দিবে, না হবে কাতর।
তবে দয়া করিবেন পীর পয়গম্বর।।"

➡️ পূজার জন্য যথাযথ দক্ষিণা প্রদান করা উচিত, যাতে কেউ কৃপণ না হয়।
➡️ যারা উদারভাবে দান করে, সত্যনারায়ণ তাদের প্রতি কৃপা করেন।


উপসংহার

🔹 "গ্রন্থ সাঁঙ্গ হৈল বিরচিল দ্বিজ রাম।
সবে হরি ধ্বনি কর মুজ্ রা সেলাম।।"

➡️ দ্বিজ রামেশ্বর এই গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা সত্যনারায়ণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে।
➡️ তাই সকল ভক্ত ‘হরি বল’ ধ্বনি করুন এবং সত্যনারায়ণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করুন।


মূল শিক্ষা ও বার্তা

সত্যনারায়ণের ব্রতের মাহাত্ম্য – সত্যনারায়ণের ব্রত পালন করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয় এবং পরম মোক্ষ লাভ করা যায়।
দয়ার আধার – সত্যনারায়ণ সকল দুঃখ ঘোচান, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে আশীর্বাদ করেন।
ভক্তির মূল্য – সচ্চিত্তে ও উদারভাবে পূজা-অর্চনা করলে সত্যনারায়ণের কৃপা পাওয়া যায়।
হরি ধ্বনি ও সুমতির আশীর্বাদ – সত্যনারায়ণ পূজা করলে কল্যাণ হয়, তাই ভক্তরা সবসময় হরি ধ্বনি করুক।

এই স্তোত্রটি সত্যনারায়ণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁর কৃপা লাভের উপায়কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে। 🙏

প্রণাম

অর্চ্চনং বন্দনং পাঠং নমস্কারং ক্ষমস্বতে । 

প্রসাদানন্দ সংযােগে স্তুতিং কৃত্বা গৃহং গত্বা ।।

গুণানুচিন্তয়েৎ ভক্ত্যা রাত্রৌ নিদ্রা ন লভ্যতে ।

এবং কৃতে মনুষ্যাণাং নিত্যানন্দং সুখং ভবেৎ।।

শ্লোকের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা

🔹 "অর্চ্চনং বন্দনং পাঠং নমস্কারং ক্ষমস্বতে।
প্রসাদানন্দ সংযােগে স্তুতিং কृत्वা গৃহং গত্বা।।"

➡️ সত্যনারায়ণ বা ঈশ্বরের পূজা, বন্দনা, পাঠ, এবং নমস্কার করার পর, ভক্তরা তাঁর প্রসাদ গ্রহণ করে।
➡️ তারপর ঈশ্বরের মাহাত্ম্য স্মরণ করে এবং স্তুতি করে গৃহে ফিরে যায়।

🔹 "গুণানুচিন্তয়েৎ ভক্ত্যা রাত্রৌ নিদ্রা ন লভ্যতে।
এবং কৃতে মনুষ্যাণাং নিত্যানন্দং সুখং ভবেৎ।।"

➡️ যাঁরা ভক্তিভরে সত্যনারায়ণের গুণ ও লীলার স্মরণ করেন, তাঁরা রাতেও ঈশ্বরের চিন্তায় মগ্ন থাকেন, ফলে তাঁদের মনে প্রশান্তি বিরাজ করে।
➡️ এইভাবে সত্যনারায়ণের কৃপা লাভ করলে মানুষের জীবনে চিরস্থায়ী আনন্দ ও সুখ আসে।


মূল শিক্ষা ও বার্তা

সত্যনারায়ণ পূজার মাহাত্ম্য – পূজা ও স্তুতি করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রসাদ লাভ করা যায়।
ভক্তির ফল – যারা ভক্তিভরে ঈশ্বরের গুণ স্মরণ করেন, তাঁদের মন সর্বদা শান্ত ও আনন্দে পূর্ণ থাকে।
চিরস্থায়ী সুখ ও মোক্ষ লাভ – সত্যনারায়ণের চরণে আত্মনিবেদন করলে জীবনে চিরসুখ ও নিত্য আনন্দ লাভ হয়।

এটি সত্যনারায়ণ ব্রতের পরবর্তী করণীয় এবং পূজার সুফল সম্পর্কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে। 🙏

📜 শুভ বার্তা 📜

জয় রাম! জয় গোবিন্দ! 🙏

শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালীর শ্লোকের মাধ্যমে গুরু-কৃপা ও তাঁর মহিমা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গুরুদেবের চরণে আমাদের শ্রদ্ধা ও আশ্রয়, এটাই আমাদের পরম পাথেয়।

গুরুর কৃপায়ই জীবনের সত্য পথ উদ্ভাসিত হয়।

আমি, গুরুভাই সুব্রত মজুমদার, আগরতলা, ত্রিপুরা, একজন স্কুল শিক্ষক ও ‘শ্রীশ্রী রামঠাকুর ও গান - গানের ভূবন’ ইউটিউব চ্যানেলের পক্ষ থেকে সকলকে প্রণাম ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, দয়া করে জানাবেন।
সবার মঙ্গল কামনায়,
🙏 জয় গুরু, জয় সত্যনারায়ণ! 🙏


  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালী: গুরুকৃপার আলোকে
  • গুরুবাক্যে সত্যনারায়ণ ব্রতের মাহাত্ম্য
  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতকথা ও গুরুর কৃপা
  • সত্যনারায়ণ পাঁচালী: গুরুবাক্যের সুধাধারা
  • গুরুকৃপা ও সত্যনারায়ণ ব্রতের পবিত্র গাথা
  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালী: ভক্তির পথপ্রদর্শক
  • গুরুবাক্যে সত্যনারায়ণ লীলার অপার রহস্য
  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ ব্রত: গুরুর আশীর্বাদে জীবনপথ
  • সত্যনারায়ণ ব্রতের মাহাত্ম্য: গুরুর চরণে সমর্পণ
  • গুরুর কৃপায় সত্যনারায়ণ ব্রতকথার পবিত্র শিক্ষা

  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ – এর পাঁচালী শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালী: গুরুকৃপার আলোকে শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ – এর পাঁচালী শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পাঁচালী: গুরুকৃপার আলোকে Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on মার্চ ১০, ২০২৫ Rating: 5

    কোন মন্তব্য নেই:

    Blogger দ্বারা পরিচালিত.